বছরভর যেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকি, ঈদ হলেই সবাই বাড়ির পথ ধরি। পরিবার আর প্রিয়জন ছাড়া কি ঈদের আনন্দ জমে! নিয়মিত ছুটির বাইরেও অনেকে কয়েকটা দিন বেশি ছুটি নেন। উৎসব উপলক্ষে পরিবার নিয়ে একটা সুন্দর সময় কাটিয়ে আসেন। তবে অনেক সময় কয়েক মিনিটের অসতর্কতা মাটি করে দিতে পারে পুরো ছুটি।
বাড়িতে যাওয়ার আগে ফাঁকা বাসার নিরাপত্তা নিয়ে তাই সজাগ থাকা জরুরি। ছুটি শুরু হওয়ার আগেই পরিকল্পনা করে নিন আপনার বর্তমান বাসার কোন বিষয়গুলো নিরাপদ রাখা দরকার। অনেক সময় বাসার জিনিস মেরামত করার থাকে। যা করব করব করেও করা হচ্ছে না। এই মোক্ষম সময়, মেরামত করে নিন বাসার লক, পানির ট্যাপ ইত্যাদি। কারণ, ছুটিতে থাকার সময় এসব জিনিস থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান রিনাত ফৌজিয়া মনে করেন, ঈদের ছুটি কাছাকাছি চলে এলে বাড়ি যাওয়ার আনন্দে অনেক বিষয় ভুল হয়ে যায়। তাই একটু আগেভাগে বাসার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।
রিনাত ফৌজিয়া বিশেষভাবে জোর দিতে বললেন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দিকে। নগর জীবনযাপনে আমরা প্রবলভাবে টেলিভিশন, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ওভেন, ওয়াশিং মেশিনের মতো নানা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে এসব যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখে যেতে হবে। এই মৌসুমে বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা গেছে। ফাঁকা ঘরে বজ্রপাতের সময় এসব যন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া থাকলে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা বেশি থাকে। ফ্রিজে বেশি খাবার জমে থাকলে সেটা এখনই শেষ করে ফেলতে থাকুন। কারণ, বাড়ি ছাড়ার আগেই ফ্রিজ খালি করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যেতে হবে।
বাসা থেকে চলে যাওয়ার দিন অবশ্যই মনে করে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে রেখে যেতে হবে। চুলার সামনের দিকের নব ছাড়াও পেছনের দিকে থাকা চাবিও বন্ধ করে রেখে যান। রান্নাঘরে ভেন্টিলেটর না থাকলে জানালা অল্প করে খোলা রাখুন। যাতে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারে। না হলে বদ্ধ ঘরে গ্যাস ছড়িয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। বাড়িতে কাজের লোক থাকলে কয়েক দিনের ছুটি দিন তাঁকে। অথবা বেড়াতে যাওয়ার সময় তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। তবে কোনোভাবেই তাঁকে একা ঘরে তালা মেরে রেখে যাবেন না।
নগরে বাসার মধ্যে অনেকেই পোষা প্রাণী রাখেন। আদরের পোষা প্রাণীটাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। তবে তাকে নিয়ে যেতে না পারলে এমন স্থানে রেখে যেতে পারেন যেখানে সে নিরাপদ থাকবে। কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন নিলাদ্রী শিকদার জানালেন, ফেসবুকে অনেক গ্রুপ আছে যারা পেট লাভার (পোষা প্রাণী ভালোবাসে)। সেখানে একটা পোস্ট দিয়ে পছন্দমতো কারও বাসায় রেখে যেতে পারেন আপনার পোষা প্রাণীকে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সেখানে পোো প্রাণীকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলে আপনি নিজেও খুঁতখুঁতানি থেকে মুক্তি পাবেন।
ঘরের বিছানার চাদরের ওপর একটা আলাদা কাপড় বা পলি দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। জানালা ও দরজার তালা ঠিকঠাক লাগানো হলে কি না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এর মধ্যে পোষা প্রাণী অসুস্থ হলেও ডাক্তার পাবেন। ঈদের দিনও এক বেলা খোলা থাকবে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এ ছাড়া অন্য দিন যেতে পারেন সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে।
শহুরে জীবনে অনেকেই নিজের বাসার বারান্দাকে এক টুকরো সবুজে ভরে তোলেন। গাছপালা আর লতাপাতায় বাড়িরও শোভা বাড়ে। তবে নিয়মিত গাছের যত্ন নিতে হয়। এর মধ্যে পানি দেওয়াটা বিশেষ দরকারি। তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেনের বললেন, ‘গাছের যত্নে পানির বিকল্প নাই। সাধারণত পানি ছাড়া এক সপ্তাহ গাছ ভালো থাকে। তবে এর বেশি হলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা নানা উপায়ে করা যেতে পারে।’